এস.এম.মনির : বিশ্বে প্রায় সবকটি দেশে হানা দিয়েছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসের করাল থাবা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। মহামারী এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সাধারন মানুষের পাশে দাড়িয়েছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ব্র্যাক বিজয়পুর এবং কুমিল্লা জেলা ব্র্যাক, সরকারি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে জেলা, উপজেলা সহ প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত, জীবানুমুক্তকরন সহ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যখন সবাই আতঙ্কিত, তখন সাধারণ মানুষের মাঝে সাবান, লিফলেট বিতরণ করা ছাড়াও মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছে ব্র্যাক বিজয়পুর এলাকা অফিস। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই তারা মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির চলমান সকল কার্যক্রম বন্ধ করে নিজেদের জীবনের কথা চিন্তা না করে ঝুঁকি নিয়ে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে দুরত্ব বেধে বৃত্ত অংকন, বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপসনালয় ও জনসমাগম স্থলে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করে বেশ ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে ব্র্যাক কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর এলকা অফিস।
এছাড়া জনবান্ধব এ অফিসের কর্মীরা মোবাইলের মাধ্যমে সদস্যদের খোঁজ খবর নেয়া, সদস্যদের মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে ব্র্যাকের নিজস্ব হট লাইন ০১৮৩৩৩০১৪১১ নম্বরে পরামর্শের জন্য অনুরোধ করা, আর্থিক সংকটে বিকাশের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঞ্চয় ফেরত দেয়া সহ নানা কর্মসূচী পালন অব্যাহত রাখছে। এসব কর্মকান্ড সফলভাবে সম্পন্ন করতে সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন সংস্থার ডিভিশনাল ম্যানেজার (দাবি) রাজেশ কুমার সাহা, ডিভিশনাল ম্যানেজার (প্রগতি) মারুফ হোসেন।
সরেজমিন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ব্র্যাক বিজয়পুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সংকট কালীন এই সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের চিন্তা মাথায় রেখে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ, সঞ্চয়ের টাকা নগদ এবং বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে প্রদান অব্যাহত রাখছে ব্র্যাক বিজয়পুর এলাকার এ অফিসটি ।
এ বিষয়ে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে উপকার ভোগী হামিদা বানু বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই ব্র্যাক থেকে ফোন করে আমাদের ঘরে খাবার আছে কিনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, এবং সুস্থতার বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছেন। আর্থিক সংকটের কথা জানালে বিকাশে সঞ্চয়ের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন আবার বিপদের সময় ঋণ দিচ্ছেন। বিপদকালীন ব্র্যাকের এই সেবা, আন্তরিকতায় আমরা উপকৃত এবং সেবা পেয়ে আমরা মুগ্ধ। ব্র্যাক বিজয় পুর এরিয়ার এলাকা ব্যবস্থাপক মো: নাসির উদ্দিন বলেন, দেশে চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে কোন সদস্যকে চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার কথা চিন্তা করে আমরা ঋণ প্রদান এবং বিকাশের মাধ্যমে সঞ্চয় ও ডিপোজিটের টাকা প্রদান করছি। তবে যারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল তারা সেচ্ছায় বিকাশের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করছেন। এলাকা ব্যবস্থাপক (প্রগতি), মো: জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের এসব সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে শাখা ব্যবস্থাপক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্র্যাক সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। দূর্যোগকালীন এই সময়ে ব্র্যাকের সেবা মূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
ফোনালাপ কালে এক প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লা-২ অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (দাবি) মহসিন চৌধুরী ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (প্রগতি) মাহফুজুর রহমান জানান, ব্র্যাক মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশের প্রতিটি দূর্যোগ মূহুর্তে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংকটেও ব্র্যাক দেশের মানুষের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে যা চলমান আছে। এছাড়া সারাদেশে হত দরিদ্রদের মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিকাশের মাধ্যমে সঞ্চয় ফেরত, সচেতনতা মূলক বিভিন্ন সেবা মূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। উপকার ভোগী এবং সুধী মহল ব্র্যাকের এসব কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন।